সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১২ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম
বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কবৃদ্ধি, ভারত-পাকিস্তানের চেয়েও বেশি | যশোর জার্নাল অভয়নগরে ঈদ মেলায় ফুচকা খেয়ে অসুস্থতা: দোকানি গ্রেফতার | যশোর জার্নাল সাংবাদিক সাগর-রুনি হত্যা: বিচারের অপেক্ষায় এক যুগ | যশোর জার্নাল নরসিংদীতে গণপিটুনির প্রতিবাদ করায় দুই ভাইকে হত্যা | যশোর জার্নাল যশোরে ঈদের দিন সংঘর্ষে যুবক নিহত, আহত চারজন | যশোর জার্নাল যশোরে যুবকের লাশ উদ্ধার: পাশে মোটরসাইকেল ও কাঠের টুকরা |যশোর জার্নাল যশোরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ২০ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুইজন গ্রেফতার | যশোর জার্নাল সড়কে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের সাথে ইফতার করলেন পুলিশ সুপার যশোর | যশোর জার্নাল যশোরে শিশু অপহরণের মূলহোতা আটক, মুক্তিপণের টাকা উদ্ধার | যশোর জার্নাল নিহত পুলিশ সদস্যদের পরিবারকে ঈদ উপহার দিলেন যশোর জেলা পুলিশ | যশোর জার্নাল

বিদেশে কর্মী পাঠানোর নামে প্রতারণা ‘এসআই ওভারসীজ লিমিটেডের’ বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ | যশোর জার্নাল

আশিকুর রহমান শিমুলঃ

প্রতি বছর হাজার হাজার নিরক্ষর, অশিক্ষিত ও স্বল্পশিক্ষিত যুবকরা পরিবারে সচ্ছলতা আনার আশায় সৌদি-মালয়েশিয়ার মতো দেশে উপার্জনের উদ্দেশে পাড়ি জমান। কিন্তু এদের মধ্যে অনেকে আবার রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতারণার শিকার হয়ে কাজ না পেয়ে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরছেন। এতে সেই সেসব যুবকদের পরিবারে নেমে আসে মানবেতর দিনলিপি। এমনই ভাবে রাওয়ায়ে আল নজুম ট্রান্সপোর্ট ইস্টাবলিসমেন্ট ‘এসআই ওভারসীজ লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশ গিয়ে অনেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার অনেকর বিদেশ না পঠিয়েই মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে দিয়েছে কোম্পানিটি।
মাদারিপুর জেলার কালকিনি উপজেলার সাহেবরামপুর গ্রামের বাদল ইসলাম নামে এক সৌদি প্রবাসির অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন ‘এসআই ওভারসীজ লিমিটেড’ নামে একটি ঢাকায় অবস্থিত কোম্পানি সৌদি আরবে কর্মী ভিসার লোক পাঠিয়ে থাকেন। তার উপজেলার পূর্ব পরিচিত মুছায়েদ ও শাহিন নামে দু’যুবকের সৌদি আরব আনার জন্য মোবাইল ফোনে ওই কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেন। এ সময় ফোনের অপর পাশ থেকে আফরোজা মিতু নামে এক নারী নিজেকে এসকে ওভারসীজ লিমিটেডের মার্কেটিং অফিসার পরিচয় দিয়ে কথা বলেন।

এরপর শুরু হয় কোম্পানির টাকা হাতাবার কারবার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত বিভিন্ন সময় চেক ও বিকাশের মাধ্যেমে ওই দুই যুবককে বিদেশ পাঠাতে হাতিয়ে নিয়েছে ৭ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এমনকি আজও তারা বিদেশ যাওয়া তো দূরের কথা আরও টাকা দাবি করে জিম্মি করে পাসপোর্ট আটকে রেখেছেন। দীর্ঘদির পার হয়ে গেলেও বিদেশ যেতে না পেরে ওই দুই যুবক বাদল ইসলামকে চাপ সৃষ্টি করছেন। এতে করে তিনি পড়েছেন মহা বিপাকে।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, এই চক্রর মূল হোতা রেজা শিকদার ও আফরোজা মিতু নামে তারা দু’জন। ফেসবুকে নানা নামে পেইজ খুলে বিদেশ পাঠাবার কথা বলে তারা টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ভিজিটিং কার্ডে দেয়া ঠিকানা ভুয়া। তারা বিভিন্ন সময় বিভন্ন ভিজিটিং কার্ড তৈরি করে মানুষের সাথে প্রতারণা করেন। আবার কিছুদিন পর ঠিকানা, কোম্পানির নাম ও মোবাইল নাম্বার চেন্স করে ফেলেন। আফরোজা মিতু তার ভিজিটিং কার্ডে ঠিকানা দিয়েছেন এআর টাওয়ার লিফট-৪, ১৭ কামাল আতাতুর্ক এডিনিউ বনানী ঢাকা। আবার তাদের অফিসিয়াল ফেসবুকে ব্যবহার করছেন এ আর টাওয়ার, লিফট-৯, ২৪ কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, বানানী, ঢাকা। ভিজিটিং কার্ড ও ফেসবুকেও তারা ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করছেন। তারা মূলত প্রতারক চক্র। বিভিন্ন গ্রামের সহজ সরল মানুষের ফাঁদে ফেলে অর্থআত্মসাৎ করা মূল লক্ষ্য। তাদের অফিসিয়াল ফেসবুকে এক একাধিক প্রমান চোখে পড়েছে।
তাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে গেলে পোষ্টের কমেন্টে দেখা যায়, এমডি রানা নামে এক ব্যক্তি কমেন্ট করেছেন ‘এনারা কোম্পানির কথা বলে যাত্রীকে পাঠায় সাপ্লাই কোম্পানিতে কাজ দেয় না, বসায় রাখে। এখানে প্রায় তিন চারশ লোক আছে’। রেস্টুরেন্টের কাজের কথা বলা আমার কাছ থেকে ৪ লাখ ৭০ টাকার টাকা নিছে’। সমেশ্ আহমেদ নামে এক ব্যক্তি কমেন্ট করেছেন, ‘আপনারা কেউ এই অফিসের মাধ্যমে সৌদি কিংবা অন্য কোন দেশে কাজের জন্য যাবেন না, এরা কোম্পানি কিংবা সাপ্লাই কোম্পানির কথা বলে বিদেশ আনার পর এইগুলা কিছুই মিলে না, এরা প্রতারক। যাদের দেখছেন এরা দালাল এর মাধ্যমে ৫-৬ মাস কাজ করতে পারবে, পরে আর কেউ খোঁজ খবর নিবে নাহ, পরে যার যার অবস্থান তার তারই তৈরি করে নিতে হয়। বিদেশ আসার আগে অবশ্যই ভেবেচিন্তে আসবেন।’ নুসরাত জাহান নিশাত নামে এক জন লিখেছেন, ‘কেউ আসবেন না । ওরা দালাল চক্র। কোম্পানি বলবে সৌদি আরব এসে দেখবেন যে সাপ্লাই ভিসা ওখানে ৪০০ জনের উপরে লোক বসাই রাখছে। আমার ভাই এদের আন্ডারে। ৩ মাসে পরে দেশে চলে আসলো, কোনো কাজ পাই নাই। নিজেদের আত্মীয় স্বজন থাকলে তাদের মাধ্যমে সৌদি আরব আসেন।’ এমন অসংখ্য মানুষ তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কোম্পানির বিভিন্ন কার্যক্রমের পোস্টে কমেন্ট করে ক্ষোভ জানিয়েছেন।
ভুক্তভোগী বাদল ইসলাম আরও জানান, তিনি প্রতিবেশি দু’যুবকের বিদেশ যাবার টাকা নিয়ে এই কোম্পানিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অপরদিকে, কোম্পানিকে একাধিক বার যোগাযোগ কররেও তারা তার সাথে যোগাযোগ করছে না। এমন ভাব করছে যে, ওই কোম্পানি তাকেই চেনেই না। অথচ আফরোজা মিতু বিকাশে ও রেজা শিকদার চেকের মাধ্যেমে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছে তার একাধিক প্রমানপত্র তার কাছে আছে। একই সাথে তাদের সাথে কথাবার্তার ও টাকা লেনদেনের একাধিক কর্ল রেকর্ড রয়েছে। তিনি সৌর আরব থেকে ফিরে ঢাকার আতালতে এই চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন।
প্রতারণার বিষয়ে জানতে এসআই ওভারসীজ লিমিটেডের ভিজিটিং কার্ডে পাওয়া নাম্বারে ফোন দিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে বক্তব্য জনাতে চাইলে ব্যস্থ আছেন বলে ফোন রেখে দেন এক নারী।
বনানী থানা ওসি রাসেল জানান, এ বিষয়ে তার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে আপরাধিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য সরকারি, বিধিমালার ১৩ ধারায় বলা হয়েছে, কেউ কোনো রিক্রুটং এজেন্সি দ্বারা প্রতারিত বা ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের প্রচলিত আইনে তিনি মামলা করতে পারবেন। এর বাইরে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি কোনো রিক্রুটিং এজেন্সিসহ সংশ্লিষ্ট যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণা, অবৈধভাবে অর্থ গ্রহণ বা কর্মসংস্থান চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগসহ সংশ্লিষ্ট অন্য যেকোনো বিষয়ে লিখিতভাবে সরাসরি বা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে কিংবা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বা ব্যুরোর অধীন জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয় অথবা গন্তব্য দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনের মাধ্যমে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ দাখিল করতে পারবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন :

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত